বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বহমান মরা চিত্রা নদী ও হক ক্যানেল এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। কচুরিপানা ও মানুষের ফেলা ময়লা আবর্জনায় পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা সদর বাজারের বাসিন্দাদের কমপক্ষে দুই শতাধিক পয়ঃবর্জ্য ও নর্দমার ড্রেন লাইন এই মরা চিত্রা নদী ও হক ক্যানেল রয়েছে। মানুষ তাদের মৃত গবাদি পশু-পাখি পানিতে ফেলায় দুর্গন্ধে পরিবেশ মারাত্মক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নদী ও ক্যানেলের পানি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে আছে। এছাড়া ভ্যাসাল জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার রুপ নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওয়াতায় এ নদী ও ক্যানেলটির খনন কাজ হলেও তারা পয়ঃবর্জ্য ও নর্দমার ড্রেন অপসারণের কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ খনন প্রকল্পের উদ্যোগ বিফলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ২০১৯ সালের শেষের দিকে ৩টি নদীসহ ৫৫ খালের খনন কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৫৬ কোটি টাকা। এলাকাবাসির অভিযোগ বেশীর ভাগ খাল ও নদী খনন হলেও চিতলমারী উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বহমান মরা চিত্রা নদী ও হক ক্যানেল নামমাত্র খনন করা হয়। কিন্তু খননের পর শুধু উপজেলা সদরের দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মরা চিত্রা নদী হক ক্যানেলের দু’পাড়ে কমপক্ষে দুই শতাধিক পয়ঃবর্জ্য ও নর্দমার ড্রেন লাইন রয়েছে। যা ভয়াবহ ভাবে পরিবেশকে দূষণ করছে। খাল খননের সাথে সাথে ওই সমস্ত পয়ঃবর্জ্য ও নর্দমার ড্রেন লাইন অপসারণ বা বন্ধ না করায় নদীর ও ক্যানেলের দু’পাড়ের বাসিন্দারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরিবেশবিদরা মনে করছেন নদী ও খাল থেকে পরিবেশ দূষণকারী এই পয়ঃবর্জ্য ও নর্দমার ড্রেন লাইন এবং কচুরিপানা অপসারণ না করায় ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ খনন প্রকল্পের উদ্যোগ বিফলে যাচ্ছে।
মরা চিত্রা নদী পাড়ের বাসিন্দা মোস্ত মাসুদ তালুকদার, রুহুল আমিন মিঠু বিশ্বাস, সৈয়দ মনির হোসেন, রুপালী বেগম, গাউছ গাজিসহ অসংখ্য মানুষ জানান, খাল খননের শুরুতে তারা প্রাণের স্পন্দন দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু পয়ঃবর্জ্য ও নর্দমার ড্রেন লাইন অপসারণ বা বন্ধ না করায় এবং মাইলের পর মাইল কচুরিপানায় নদী ও খাল বন্ধ হওয়ায় তারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। কারণ এই পানি আর ব্যববহার যোগ্য নেই। এছাড়া বেশীর ভাগ মানুষ তাদের যাবতীয় ময়লা আবর্জনা ও মৃত পশু-পাখি এ খাল ও নদীতে ফেলছে। তাদেরও কেউ বাধা দেয়ার নেই।
এ ব্যাপারে শিক্ষক মো. সাফায়েত হোসেন জানান, এগুলো অপসারণ ও বন্ধে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ উপজেলার মানুষের সীমাহীন পানির কষ্ট রয়েছে। তাছাড়া যারা পরিবেশ দূষণ করছে তারা অপরাধ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসিনতার কারনে এ জাতিয় পরিবেশ বিধংসী কর্মকা- চলছে। যার কারণে পরিবেশ চরম হুমকির মুখে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, ‘কচুরিপানা অপসারণের জন্য আমরা সীমিত বাজেট পাই। আগামী অর্থ বছরের বাজেটের টাকা পেলে আমরা এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব।’
খুলনা গেজেট/ টিএ